পা’রিবারিক সহিং’সতার যেসব ঘ’টনার অভিযোগ ক’র্তৃপক্ষের কাছে আসে তার সিং’হভাগের ক্ষেত্রে নি’র্যাতিত না’রীটি এসব ঘ’টনা প্রকাশ করেন। জা’তিসংঘের পরি’সংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীর না’রীদের এক তৃতীয়াংশ তাদের জীবনে শা’রীরিক বা যৌ’ন সহিং’সতার শি’কার হয়। সেই তুলনায় পরিবারের পু’রুষ সদস্যের ও’পর সহিং’সতার বি’ষয়টি যেমন অনেক কম আলোচনায় আসে, তেমনি এ ধরণের ঘ’টনা খুব বেশি ঘটেও না।
অনেক সমাজেই পু’রুষদের জন্য পারিবারিক সহিং’সতার বি’ষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চল নেই, এবং অনেকক্ষেত্রে ভু’ক্তভোগীদের একাই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়। পরিচয় গো’পন রাখার শ’র্তে ইউক্রেনের এক তরুণ বিবিসি’র কাছে তার জীবনের ঘ’টনা বলেন। তার জবানিতেই তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘ’টনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো এখানে।
তার ভাষ্য মতে, আমাদের কোনো আর্থিক সমস্যাও ছিল না। এর মধ্যে পৃথিবীর অনেকগুলো দেশও ঘুরে আসি আমরা দু’জন। আমরা যখন অন্য কোথাও ভ্রমণ করতাম, তখন তাকে ভ’য় পেতাম না। সে মানুষের সামনে আমাকে নি’র্যাতন করে না।
তবে ও যেন আমাকে একা না পায়, সেই বি’ষয়টা নিশ্চিত করা ছিল গু’রুত্বপূর্ণ। মাত্র কিছুদিন আগে আমি বুঝতে পারি যে, আমার সাবেক স্ত্রী দশ বছর ধরে আমাকে ধ’র্ষণ করছে। ইরা আমার জীবনের প্রথম না’রী ছিল।
তখন আমি বলতাম, “আমি ক্লান্ত। আমি বিশ্রাম নিতে চাই।” তখন সে আমাকে আ’ক্রমণ করতো। নখ দিয়ে আমাকে আ’ঘাত করতে থাকতো যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি র’ক্তাক্ত হতাম। সে কখনও আমার মুখে আ’ঘাত করতো না। এমন জায়গায় করতো যা পোশাকের নীচে থাকবে: যেমন বুকে, পিঠে বা হাতে। আমি কখনও প্র’তিবাদ করতাম না কারণ আমি মনে করতাম একজন না’রীকে আ’ঘাত করা ঠিক কাজ নয়।
আমি হীন’মন্যতায় ভুগছিলাম এবং নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল। হোটেলে একবার নিজের জন্য আলাদা রুমও নিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমি তাদের ভাষা বুঝতাম না, তাই শেষপর্যন্ত রুম নিতে পারিনি। কাজ শেষে হোটেলে ফিরে যেতে ভ’য় লাগতো আমার। তাই রুমে ফিরে না গিয়ে বিভিন্ন শপিংমলে ঘুরে বেড়াতাম। শপিংমল বন্ধ হওয়ার পর ঘুরতাম শহরের অলিগলিতে।
শরৎকালের ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এরকম ঘোরাঘুরির ফলে আমার ইউরিন ইনফেকশন, প্রোস্টেইটিস ও জ্বর হয়। কিন্তু এসব কিছুই ইরাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সে যা চাইতো, তা আমার করতে হতো। ইউক্রেনে ফিরে যাওয়ার পর আমি আমার বাবা-মা’র সাথে থাকতে শুরু করি, ইরার সাথে যোগাযোগ করাও বন্ধ করে দেই। কিন্তু তার সাথে বিচ্ছেদের প্রচেষ্টা দীর্ঘায়িত হয় দশ বছর পর্যন্ত।
আমি তার সাথে ঝগড়া করে সবকিছু থেকে তাকে ব্লক করে দিতাম, সে এলে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখতাম। কিন্তু সে বন্ধ দরজার ওপারে বসে আমাকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতো, বলতো যে সব ঠিক হয়ে যাবে। শুরুর দিকে আমি তার সাথে ছাড়াছাড়ির অনেক চেষ্টা করলেও সময়ের সাথে সাথে আমার চেষ্টাও কমতে শুরু করে। পরে একপর্যায়ে আমি চেষ্টাই ছেড়ে দেই। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়, এবং আমরা বিয়ে করিও। যদিও আমার বিয়ে করার কোনো আ’গ্রহ অবশিষ্ট ছিল না।
ইরা সবার ব্যাপারে ঈ’র্ষান্বিত ছিল। আমার বন্ধু, পরিবার সবার ব্যাপারে। আমি যেখানেই যেতাম, আমার সবসময় তাকে ফোন করতে থাকতে হতো। আমাকে ছাড়া সে কোথাও যেতে পারতো না – আমি যেন সব জায়গায় তার মনোরঞ্জন করার খেলনা ছিলাম। ইরার কোনো চাকরি ছিল না। আমার আয়েই আমাদের খরচ চলতো। দুই বে’ডরুমের একটা বড় অ্যা’পার্টমেন্ট ভাড়া নেই আমরা।
আমরা ঘুমাতামও ভিন্ন রুমে এবং আমার রুম বন্ধ করার ব্যবস্থা ছিল না। আমি যদি ‘ভু’ল’ কিছু করতাম, তখন সে আমার সাথে চি’ৎকার করতো এবং আমাকে মারতো। প্রায় প্রতিদিনই এরকম ঘ’টনা ঘটতো। যে কোনো বি’ষয়ে সে আমার দোষ দিতো। আমি সবসময় শুনে এসেছি যে তার কোন ধরণের পু’রুষ পছন্দ এবং তার জন্য সেই পু’রুষ কী কী করবে। সে যা করতে বলতো, শুধু তার রাগ থেকে বাঁচার জন্য আমি তাই করতাম।
স’ম্পর্কের শুরুর দিকে সে’ক্স ভালো লাগলেো পরে একটা লম্বা সময় আমার আর সে’ক্স ভালো লাগতো না। কিন্তু শেষ তিন চার বছর সে’ক্সের কথা চিন্তা করলেই আমার প্যানিক অ্যা’টাক হতো, আমি আ’তঙ্কিত হয়ে পড়তাম। যখনই ইরা আমার ইচ্ছার বি’রুদ্ধে আমাকে ধরে আমার সাথে যৌ’নমি’লনে উদ্যত হতো, তখনই এরকম হতো। আমার মধ্যে যখন আ’তঙ্ক তৈরি হতো, আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঘর থেকে, কখনো বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতাম।
ইরার বিশ্বাস ছিল আমার জন্যই আমাদের যৌ’নজীবনে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই কয়েক বছর পরপর আমাকে সে’ক্সোলজিস্টের কাছে নিয়ে যেতো সে। ডিভোর্সের কিছুদিন আগে থেকে আমি যৌ’ন সহিং’সতার কথা মানুষকে বলা শুরু করি। সেসময় ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইটে পরিচয় প্রকাশ না করে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘ’টনাগুলো জানাই আমি একজনকে। সেবারই প্রথম আমি কারো সাথে সেসব ঘ’টনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। সেখান থেকে আমি সাহস পাই এবং ধীরে ধীরে নি’র্যাতনের বি’রুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠি।
আমি ও ইরা দু’জনই চিকিৎসকের সাথে একসাথে আলোচনা করতাম। ঐ সময়ই আমি প্রথমবার কোনো চিকিৎসকের সামনে যৌ’ন নি’র্যাতনের অভিযোগ তুলতে স’ক্ষম হই।
আর সেগুলো বলার পর ইরা ভীষণ ক্ষি’প্ত হয়ে ওঠে। সে বলতে থাকে যে আমার অভিযোগ মিথ্যা। তবে ঐ ঘ’টনার পরপরই সে ডিভোর্সের পরামর্শ দেয়। আমিও সুযোগ হাতছাড়া করিনি।
একমাস পর যেদিন ডিভোর্সের কাগজ হাতে পাই, সেটি ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। ডিভোর্সের পর একদিন আমি চি’ৎকার করে তাকে বলি, “তুমি আমাকে ধ’র্ষণ করছিলে?” সে উত্তর দিয়েছিল, “ধ’র্ষণ করছিলাম? তো কি হয়েছে!!” সেদিন তার কথার উত্তর দিতে পারিনি আমি, এখনও সেই উত্তর জানা নেই। তবে সে অন্তত স্বীকার করেছে অভিযোগ, যদিও এ নিয়ে হাসাহাসিই বেশি করেছে।