সারাদেশঃ বয়সের ভারে শ’রীর আর চলে না। শ’রীরের গঠন জীর্ণশীর্ণ। দেখলে বোঝা যায়, রো’গ-শো’কে অনেকটাই ক্লান্ত তিনি। বয়স তার ৭০ বছর। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন হতদরিদ্র এই বিধবা না’রী। এ অবস্থায় দু’মুঠো খাবার জোগাতে রাস্তায় নেমেছেন তিনি।
ভিক্ষার জন্য বসে পড়লেন রাস্তার পাশে। এরই মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে সবার কাছে হাত পাতলেন তিনি। ঘরে খাবারের কতটা স’ঙ্কট থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার ড্রেনের পাশে কাদা-মাটিতে ভিক্ষার জন্য বসেছিলেন এই বৃ’দ্ধা- তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
বলছি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজে’লার ৪ নম্বর হালুয়াঘাট ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া গ্রামের সালেমুন নেছার (৭০) কথা। তার স্বা’মী হাফিজুর রহমান ১০ বছর আগে মা’রা যান। তখন থেকে সালেমুন নেছার জীবনযুুদ্ধ শুরু হয়। এটি এখন কঠিন জীবনযু’দ্ধে রূপ নিয়েছে।
তাদের সংসারে এক ছেলেস’ন্তান ছিল। স্বা’মীর অল্প কিছু জমি ছিল। ছেলে বড় হয়ে জমি বিক্রি করে অ’সহায় মাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। নিজের স’ন্তান কি করে মা আজো জানেন না। বৃ’দ্ধা মা কেমন আছেন তার খোঁজখবর নেন না একমাত্র স’ন্তান।
বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বাজারের সব মানুষ দৌড়ে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেন। এ সময় বৃ’দ্ধা সালেমুন নেছা রাস্তার পাশে বসে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন। আশপাশের লোকজন এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফে’লেছেন। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদা-পানিতে একাকার হয়েছিল।
ঘণ্টাব্যাপী রাস্তায় বসেছিলেন ওই বৃ’দ্ধা। এ অবস্থায় মুখটা কাপড় দিয়ে ডেকে ভিক্ষার থালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সালেমুন নেছা। তখন পর্যন্ত কেউ তাকে চিনতে পারেননি। সবার মুখে ছিল একই কথা, আহারে! কে এই বৃ’দ্ধা।
এমন দৃশ্য দেখে চোখ ফেরাতে পারেননি সুমন আহমেদ। তিনি একই উপজে’লার বাসিন্দা। হঠাৎ বৃ’দ্ধাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন সুমন। তার ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।
হালুয়াঘাট বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, মাঝে মধ্যে দেখি এই বৃ’দ্ধা ভিক্ষা করতে আসেন। ভালো করে হাঁটতে পারেন না তিনি, দেখে খুব মায়া লাগে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টির মধ্যে ড্রেনের পাশে বসে ভিক্ষা করার দৃশ্য দেখে চোখে পানি চলে আসে আমাদের। তার জন্য ব’য়স্ক কিংবা বিধবাভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করলে এভাবে রাস্তায় বসতে হতো না।
এ বি’ষয়ে হালুয়াঘাট উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ড্রেনের পাশে বসে ওই বৃ’দ্ধার ভিক্ষা করার ছবি দেখেছি আমরা। ইতোমধ্যে অ’সহায় বৃ’দ্ধা সালেমুন নেছার বাসায় উপজে’লা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
তার সম্প’র্কে বিস্তারিত জেনেছি। তাকে স’রকারিভাবে সহায়তা দেয়া হবে। থাকার জন্য সালেমুন নেছাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। একই স’ঙ্গে তাকে একটি ভাতার কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।