আপন ভাইয়ের সম্পদ ও সম্পত্তি মে’রে দেওয়া ভাইটিও দিন শেষে একটি আদর্শ সমাজ চায়! নিজ পিতার অ’বৈধ উপার্জনে অর্জিত অর্থে লেখাপড়া করা ছাত্রটি, বাবার অন্যায়ের বি’রুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালেও সব দিক দিয়ে সুন্দর একটি বাংলাদেশ চায়!
এক হাত জায়গা নিয়ে মা’রামারি করা উ’ত্তেজিত মহাশয়গণ দেশে আইনের প্রয়োগ ও বিচার পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না বলে বি’ষোদগার করে! থানা অথবা আ’দালতে মিথ্যা মা’মলা ঠুকে দেয়া তথাকথিত সৎ মানুষও সমাজে এত কোন্দল পছন্দই করেন না!
নিজ বাসায় ছেলের বউয়ের উপর নি’র্যাতন করা শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরে গেলে না’রী নি’র্যাতন একদমই পছন্দ করেন না! হোয়াইট কালার ক্রা’ইম করে প্রতি বছর স’ন্তানদের বিলাসবহুল জীবন দিয়ে অনেকেই বলেন এদেশ ঠিক আমাদের সাথে যায় না!
অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিশাল বাড়ি নির্মাণ করে বিশেষ পেশাজীবীগণ হাতে তজবি নিয়ে দেশটা রসাতলে গেল বলে ক’ষ্ট পান!
ক্ষুদ্র থেকে ধরে বৃহৎ ব্যবসায় কতিপয় ব্যবসায়ী বিভিন্ন অসৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্যবসার দ্বার উন্মোচন করে এবং এই দেশ মন্দ বলে চি’ৎকার করে নিজের ক্ষো’ভ প্রকাশ করেন! পবিত্র রমজান মাসে তাদের পাপকর্ম আকাশ ছুঁয়ে ফেললেও তারা নিজেদের সঠিক বলেই দাবি করেন!
মজার বি’ষয়টা হলো এদের প্রত্যেকের অ’পরাধ ব্যক্তির অ’পরাধ হলেও শুধু একটি ‘সব সময়ের মাথা ব্য’থা সৃষ্টিকারী’ পেশার একজনের দায়, তাদের সকলকে বহন করতে হয়!
মহান স্বাধীনতা যু’দ্ধে প্রথম স’শস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্বীকৃতিও বহুবছর পর মেলে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায়!
তারপর আসলো ক’রোনা যু’দ্ধ! নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে অপ্রিয় পেশার এই লোকজন হাজারে, হাজারে আ’ক্রান্ত হন এবং জীবন দান করেন! মানবতার খাতিরে যে কাজ নিজের নয় সেই কাজও করেন!
আর যাদের কাজ, তারা ঘরে আরাম কেদারায় অথবা বিছানায় শুয়ে, বসে বলতে থাকেন “আমরা ঘরে আছি, আপনারাও ঘরে থাকুন”। এবং দিনশেষে তারা খুব ভাল মানুষ হিসেবেই পরিগণিত!
এই দু’র্যোগে অনেকেই নিজের বাবা, মা, ভাই ও বোনের লা’শ ফে’লে দিয়ে পা’লিয়েছেন, অ’সুস্থ অবস্থায় ফে’লে গেছেন নিজের স্বজনকে, তারা নিজেদের নীচুতা না দেখে, হঠাৎ অকুণ্ঠ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অপ্রিয় পেশার মানুষদের!
বড্ড অদ্ভুত এই ভালবাসা! ক’রোনাকালীন এই পেশার অভিভাবকের আহ্বানে সবাই এক যোগে কাজ করেছেন, তাই সবাইকে নিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে! আবার গুটিকয়েকের অ’পরাধে সবাইকে দায়ী করা হয়েছে!
আপনাদের পেশার কারো একজনের দায় যদি আপনাদের সকলের না হয়, এই বিশেষ পেশার দায় তাদের সকলের হবে কেন? পোশাক দেখা যায় বলে? তাহলে পোশাক ছাড়া অ’পরাধ কি অ’পরাধ নয়? আমার বিচ্যুতি নিয়ে বলেন, সমস্যা নেই, সকলকে দায় কেন দেবেন?
তাহলে কি পোশাকধারী এই পেশা ছাড়া আপনারা সকলে সাধু, দরবেশের বেশেই আবির্ভূত হয়েছেন?
ছেলেবেলায় পড়েছি পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করুন! আমি বলছি শুধু পাপ নয়, পাপীকেও ঘৃণা করুন! মাথায় রাখু’ন পেশা কখনো খা’রাপ হয় না, পেশাজীবীরা খা’রাপ হোন!
আপনাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখু’ন, আপনারা সবাই ঠিক আছেন কিনা? যদি না থেকে থাকেন, তাহলে উপরোক্ত বর্ণনা অনুসারে, বিভিন্ন পেশায় আপনাদের চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সেটিও মাথায় রাখু’ন!
প্রলোভন ছাড়া পেশায় থেকেও আপনাদের অনেকেই অ’পরাধের সীমা ছাড়িয়ে ফে’লেন! আর অন্যদিকে একটি পেশায় হাজারো প্রলোভন থাকার পরও হাজারে হাজারে অফিসার দিনের পর দিন সততার সাথে নিজেদের যু’দ্ধ চা’লিয়ে যান! আপনার তুলনামূ’লক সহজ যু’দ্ধের তুলনায় যে কঠিন যু’দ্ধ তাঁরা চালান, দয়া করে তাঁদের মনোবল ভে’ঙে দিয়েন না!
যে কোনো অ’পরাধীর চূড়ান্ত শা’স্তি আমরাও চাই! আপনার ভাইয়ের অ’পরাধের শা’স্তি যেমন আপনি পান না, ঠিক তেমনি একজনের অ’পরাধের দায় অন্যকে দিয়েন না!
তা করলে এটি আপনার দ্বিমুখী চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলবে! এই সমাজের দ্বৈত চরিত্রের মানুষের জন্য কবির ভাষায় বলতে চাই,
আমরা সবাই পাপী;
আপন পাপের
বাটখারা দিয়ে;
অন্যের পাপ মাপি!
লেখক : অতিরিক্ত উপ-পু’লিশ কমিশনার, পল্লবী জোন গো’য়েন্দা বিভাগ (ডিএমপি)।