ববি, শিখা, লাবনী, চাঁদনী ওরা দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দা। যদিও ওদের নির্দিষ্ট কোন নাম নেই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ওদের নামও পরিবর্তন হয়।
ভাগ্যই এদের করেছে নাম-ঠিকানা বিহীন। জীবন-যৌবন সম্পর্কে জানার আগেই ওরা হয়ে গেছে যৌনকর্মী। জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বয়স হওয়ার আগেই
পরিবেশ ওদের বাধ্য করেছে এ পেশায় আসতে। এ রকম হাজারও গল্প দেশের বৃহত্তম গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের।
এ পথে আসার পেছনে প্রত্যেকের জীবনেই থাকে কষ্টের দীর্ঘ ইতিহাস। জীবিকার প্রয়োজনে কৃত্রিম আনন্দের মধ্যে তা লুকিয়ে রাখতে হয়।
এই অভিশপ্ত জীবন কাটানো দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দা রুপা (১৮)। ময়মনসিংহ শহরে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই সাজু-গুজুর প্রতি ছিল তার দারুণ আগ্রহ।
এ আগ্রহই তার জীবনের কাল হয়েছে। সু-শ্রী চেহারার সাথে কথা বলার বাচন ভঙ্গিতে সহজেই ফুটে ওঠে আভিজাত্য।
আলাপকালে সে জানায়, বাবা ছোট-খাটো একজন ব্যবসায়ী। বছর তিনেক আগের কথা। তাদের বাড়িতে ভাড়া থাকত বিউটিপার্লারে কাজ করা বৃষ্টি নামের এক নারী।
লেখাপড়ায় তার তেমন আগ্রহ ছিল না। বৃষ্টি তাকে বিউটি পার্লারের কাজ শেখার কথা বলে ফুঁসলিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে টাঙ্গাইলে।
সেখানে একটি বাসায় তাকে আটকে রেখে হনন করা হয় তার জীবনের অমূল্য সম্পদ। প্রায় এক মাস সেখানে তাকে লিপ্ত করে যৌন পেশায়।
এসময় তাকে দিয়ে তার পরিবারকে জানায়, ‘আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করে নিয়েছি, আমাকে আর খোঁজাখুঁজি করো না।
মাস খানেক পর সেখান থেকে বৃষ্টি তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এনে বিক্রি করে দেয়। সে হয়ে যায় তালিকাভুক্ত যৌনকর্মী।
সে আরো জানায়, প্রথম দিকে তাকে একজন পাহাড়াদার সব সময় পাহাড়া দিয়ে রাখত। এরই মাঝে একদিন সুযোগ বুঝে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর কথিত পাহাড়াদার বাহিনীর সহযোগিতা চায়।
কিন্তু তাকে সহযোগিতা করার বিনিময়ে ওই বাহিনীর কর্তা ব্যাক্তিরা দাবি করে ২০ হাজার টাকা।ওই টাকা দেয়ার সামর্থ না থাকায় তাদের কোন সহযোগিতা
তো সে পায়ই নাই বরং এ অপরাধে তার উপর নেমে আসে পল্লীর সর্দার্নীর হাতে শারীরিক নির্যাতন। এরপর থেকে সে এ পেশায় নিজেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে।
এখনো পরিবারের সাথে যোগাযোগ আছে। কিন্তু তারা জানে না তার এই অভিশপ্ত জীবন সম্পর্কে। সে বলে, ‘আমাকে এই পল্লীতে আসা একটি ছেলে ভালোবাসে।
সে আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়েছে। ও আমাকে ভরণপোষন না করলেও যদি শুধু স্বীকৃতি দেয় ওর পরিচয়েই আমি ফিরে যাব আমার পরিবারের কাছে।’
এ পল্লীর আরেক বাসিন্দা রানী (৩৫)। মানিকগঞ্জে উচ্চ বর্ণের এক হিন্দু পরিবারে তার জন্ম। জীবন সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগে কিশোরী বয়সেই সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এক মুসলিম ছেলের সাথে।
তার হাত ধরে সেই বয়সেই রানী ঘর ছাড়ে কিন্তু তার সেই প্রেমিক মূলত ছিল একজন প্রতারক। তাকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় তৎকালীন নারায়নগঞ্জ যৌনপল্লীতে।