ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অনেকগুলো গ্রন্থ লিখেছেন। তার অনেকগুলো গ্রন্থ রাজনৈতিক গবে’ষণার বি’ষয়ে এবং গ্রন্থগুলো লিখেছেন সততার স’ঙ্গে। রাজনীতিবিদ হিসেবে যতোই বি’তর্কি’ত হোক, লেখক হিসেবে তিনি অত্যন্ত মর্যাদার আসনে আছেন। তার একটি গ্রন্থ ‘কা’রাগারে কেমন ছিলো ২০০৭-৮’।
এই গ্রন্থে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কা’রাগারের ডাইরি আদলে লেখা এই বইটি ৭৭ থেকে ৭৯ পৃষ্ঠার লেখাগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
মঙ্গলবার . ৮ মে ২০০৭ . দিন ২৬
আবার আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পিজি হাসপাতালে । র’ক্তচা’প লো, এবং ফ্ল্যাকচুয়েট করছে । পেটের ব্য’থা এখনো সারেনি ৷ বিকেল ৪টায় সেখানে গিয়ে ফিরে এসেছি রাত ৮টায় ৷
শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন গতকাল । তার সাহসের আমি প্রশংসা করি। বাবার নেতৃত্বের নমুনা দেখিয়েছেন তিনি। ফলে জনগণের মধ্যে তার ভারমূর্তি বেড়েছে।
এই মুহূর্তে তিনি দেশের একমাত্র নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছেন, যদি তিনি এই সাহস অব্যাহত রেখে সঠিক সি’দ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
তবে হাসিনার ভূমিকার ভবি’ষদ্বাণী করা যায় না। খালেদাকে পরাজিত করতে গিয়ে যে কোনো কিছু করা থেকে তিনি বিরত হবেন না। সেই কারণে তার ভাবমূর্তি আবার ন’ষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
বুধবার . ৯ মে ২০০৭ . দিন ২৭
হাসিনা বিদেশ থেকে ফেরার দিন এয়ারপোর্টে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যাওয়া জনতার বি’রুদ্ধে দুটি মা’মলা করেছে পু’লিশ । মা’মলা দায়ের করা হয়েছে অজানা প্রায় ৫ হাজার মানুষের বি’রুদ্ধে।
কয়েকজন পু’লিশ অফিসারকে এ ব্যাপারে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। কী বিরাট তামাশা । এতে স’রকারের কেবল রাজনৈতিক শূন্যতার প্রতিচ্ছবিই ধরা পড়ে । এসব মা’মলা কোনোদিন আইনের চোখে টেকে না।
২০০৮ সালের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স’রকারের বর্তমান কাঠামো কি অক্ষুন্ন থাকবে? অসম্ভব! সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে বা’ধ্য। দ্বিতীয়ত, বাকি ১৯ মাসে তাদের অর্জন কী হবে?
ওদের চলে যাওয়ার পর জাতি ও জনগণের প্রা’প্তি কী হবে? কতিপয় রাজনীতিবিদকে ওরা হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে অযোগ্য প্রতিপন্ন করতে পারে ।
কিন্তু এর ফলে কি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’র্নীতি দূর হয়ে যাবে? তারা হয়তো দাবি করবে যে, মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তারা আরো সঠিক ও নির্ভু’ল একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে যাবে ।
কিন্তু আসলে এ হবে তাদের ক্ষ’মতা দীর্ঘায়িত করার একটি অজুহাতমাত্র ৷ এতিহ্যগতভাবে চলমান ভোটার লিস্টের ভিত্তিতে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তিনটি নির্বাচন ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
আজ কিছুটা সুস্থ বোধ করছি।
বৃহস্পতিবার . ১০ মে ২০০৭ . দিন ২৮
প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ১৮ মাস ধরে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করার পেছনে আসলে যে মতলব লুকোনো রয়েছে তা হলো কোনো জবাবদিহিতা ছাড়া আরো অনেক দিন ক্ষ’মতায় থাকার একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা,
কতিপয় সে’না অফিসারের জন্য টাকা বানানোর রাস্তা খুঁজে বের করার একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাবনা এবং নির্বাচন কমিশন, দু’র্নীতি দ’মন কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদের কতিপয় নিষ্কর্মা সদস্যদের আরাম-আয়েশের পদ ও পদমর্যাদা বহাল রাখা ।
এদের জন্য এ ছিল হালুয়া-রুটি ভোগ করার এক মহোৎসব । এর ফলে দেশে অনুপস্থিত থাকবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক মা’নবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আ’দালতে ন্যায়বিচার পাবার অধিকার।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ হতে থাকবে আকাশচুম্বী, বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি থেকে যাবে অব্যাহত এবং পুরোদমে একই ধারায় চলতে থাকবে দু’র্নীতির রাজত্ব, এমনকি তা প্রকটতর হয়ে উঠতে পারে ।
ইত্তেফাকের আজকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে চু’রি-ডাকাতি-ছি’নতাই-রাহাজানি ও অন্যান্য অ’পরাধমূ’লক তৎপরতা বেড়ে গেছে আ’শঙ্কাজনক হারে ।
এখন গোটা দেশের রাজনীতি বহুলাংশে নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের ও’পর। আওয়ামী লীগের বিচারবিবেচনাবোধ নীতিমালাই হবে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ামক।ত’থ্য সূত্র:বাংলা ইনসাইডার